চার বছরেও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) নতুন নয় বিভাগের শ্রেণিকক্ষ সংকট কাটেনি। ফলে অন্য বিভাগের শ্রেণিকক্ষ দিয়ে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। কিন্তু তাও চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল হওয়ায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এদিকে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে নতুন বর্ষের শিক্ষার্থীদের ভর্তির পর এই সংকট আরও প্রকট হবে বলে মনে করছেন বিভাগগুলোর শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে একইসঙ্গে চালু হওয়া আটটি ও পরের বছর চালু হওয়া আরও একটি বিভাগের বেশিরভাগেরই নেই নিজস্ব শ্রেণিকক্ষ, ল্যাব, অফিস ও সেমিনার লাইব্রেরি। নেই পর্যাপ্ত শিক্ষকও। বিভাগগুলোর বেশিরভাগেরই তিন বর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্লাস করতে হচ্ছে অন্য বিভাগ থেকে ‘ধার’ করা একটি বা দুটি কক্ষে। ফলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন ভবন, টিএসসিসির করিডোর ও গ্যালারি কক্ষে ক্লাস করতে হচ্ছে। ইউজিসি থেকে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো এবং পর্যাপ্ত ল্যাবরেটরি থাকার শর্ত না মেনেই নতুন বিভাগ খোলায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের।
জানা যায়, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের নতুন দুই বিভাগের মধ্যে হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থীরা শুরু থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিসির করিডোরে ক্লাস করছেন। পাশাপাশি অনুষদ ভবন ও ব্যবসায় অনুষদ ভবনেও কিছু ক্লাস হয়। এদিকে ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের তিন বর্ষের শিক্ষার্থীরা মার্কেটিং বিভাগ থেকে ধার করা একটি কক্ষে ক্লাস করেন।
সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে নতুন চালু হওয়া দুটি বিভাগের মধ্যে ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলে রবীন্দ্র-নজরুল কলা ভবনে ইংরেজি বিভাগের একটি কক্ষে আর সমাজকল্যাণ বিভাগের ক্লাস হয় অনুষদ ভবনের একটি কক্ষে। আইন অনুষদভুক্ত ল’ অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের তিন বর্ষের জন্য মীর মশাররফ হোসেন ভবনে অন্য বিভাগ থেকে নেওয়া একটি কক্ষ রয়েছে। এছাড়া মাঝেমধ্যে অনুষদ ভবনের একটি কক্ষে সমাজকল্যাণ বিভাগের সাথে ভাগাভাগি করে চলছে বিভাগটির শিক্ষা কার্যক্রম। এছাড়া ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে চালু হওয়া চারুকলা বিভাগের ক্লাস চলে রবীন্দ্র-নজরুল কলা ভবনের গগন হরকরা গ্যালারিতে।
এসব বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানান, শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে শিক্ষকরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোর্সগুলো শেষ করতে পারছে না। একটি কক্ষে তিন বর্ষের ক্লাস হওয়ায় রুটিন তৈরিতেও বেগ পেতে হচ্ছে। এছাড়া এক বর্ষের ক্লাস শেষ হওয়ার অপেক্ষায় দীর্ঘ সময় ক্লাসের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে অন্য বর্ষের শিক্ষার্থীদের।
ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী তামিম আদনান বলেন, চতুর্থ বর্ষে এসেও এখনো নিজেদের কোনো শ্রেণিকক্ষ পেলাম না, ক্লাস করার অপেক্ষায় বাইরে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।
হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী লাভলু বলেন, টিএসসিসির করিডোরে উচ্চ শব্দের মধ্যে ক্লাস করা খুবই কষ্টকর। এছাড়াও একেক সময় একেক ভবনে ক্লাস হওয়ায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি এ এইচ এম নাহিদ বলেন, একটি কক্ষে তিন বর্ষের ক্লাস নেওয়া খুবই কষ্টের। প্রশাসনের কাছে বারবার আবেদন করলেও ফল পাইনি। আরেকটি ব্যাচ এলে সংকট আরও বাড়বে।
এবিষয়ে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহামন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে মেগা প্রকল্পের অধীনে একাডেমিক ভবনগুলোর উর্ধ্বমুখী সম্প্রসাণ কাজ চলছে। খুব শিগগিরই এই সংকট কেটে যাবে।
Leave a Reply