বিশেষ প্রতিনিধিঃ নেত্রকোণা সাহিত্য সমাজ ১৯৯৭ সাল থেকে প্রতি বছর বসন্তকালীন সাহিত্য উৎসবের আয়োজন করে আসছে।উৎসবে বাংলা সাহিত্যে বিশেষ অবদান রাখায় প্রতি বছর এক জনগুণী মানুষকে খালেকদাদ চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার প্রদান করে থাকে।এ বছর ২৫তম সাহিত্য উৎসবে বাংলা কবিতায় বিশেষ অবদানের জন্য খালেকদাদ চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার—১৪২৮বঙ্গাব্দ পাচ্ছেন কবি শামীম রেজা নেত্রকোন জেলা প্রেসক্লাবে সোমবার দুপুরে এক সংবাদ সন্মেলনে জানান নেত্রকোণা সাহিত্য সমাজের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল্লাহ এমরান।
এ সময় অন্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন,অধ্যাপক সরোজমোস্তফা,কবি শিমুল মিলকী,কবি আব্দুর রাজ্জাকসহ জেলা প্রেসক্লাবের সম্পাদক এম.মুখলেছুর রহমান খান ও অন্যান্য সাংবাদিবৃন্দ। শামীম রেজা একই সঙ্গে কবি, কথা সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। তাঁর জন্ম ২৩ ফাল্গুন ১৩৭৭ (১৯৭১ সালের ৮মার্চ), বরিশালের ঝালকাঠি জেলার বষখালি নদীর কোল ঘেঁষা থানা কাঁঠালিয়ার জয়খালি গ্রামে, মামা বাড়িতে।তিনি সাউদপুর ও রাজাপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পড়েছেন।
বরিশালের বিএম কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক শেষে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘নিন্ম বর্গের মানুষ: বাংলাদেশ ও পশ্চিম বাংলার কবিতা—তুলনামূলক আলোচনা’ শীর্ষক অভিসন্দর্ভের জন্য তিনি পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। একাদশ শ্রেণিতে পড়ার সময় শামীম রেজা লিটলম্যাগ ‘ধানসিড়ি’ সম্পাদনার দায়িত্ব নেন। কর্ম জীবনের শুরুতে বেশ কয়েক বছর তাঁর কেটেছে কয়েকটি দৈনিকের দায়িত্বপূর্ণ পদে।ছাত্র অবস্থায় সাহিত্য সম্পাদক হিসেবে তিনি আজকের কাগজের ‘সুবর্ণরেখা’ সম্পাদনা এবং কালেরকণ্ঠ’র শুরু থেকে ‘শিলালিপি’ সম্পাদনা করেছেন দীর্ঘদিন।
২০০৩ সালের মে থেকে ২০১১ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত তিনি ঢাকা কলেজের বাংলা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। এরপর ২০১১ সালের ডিসেম্বর মাসে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে যোগদান করেন।পরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউট; বর্তমানে এর পরিচালক তিনি। শামীম রেজার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে—‘পাথর চিত্রে নদী কথা’, ‘নালন্দা, দূর বিশ্বের মেয়ে’, ‘যখন রাত্তির নাইমা আসে সুবর্ণনগরে’, ‘হূদয় লিপি’, ‘দেশহীন মানুষের দেশ’ ইত্যাদি। এর মধ্যে ‘যখন রাত্তির নাইমা আসে সুবর্ণনগরে’ কাব্যগ্রন্থের জন্য ২০০৭ সালে তিনি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় প্রবর্তিত ‘কৃত্তিবাস’ পুরস্কার লাভ করেছেন।
লেখালেখির প্রয়োজনে তিনি ভারত, কানাডা, জার্মানি, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, ইতালি, চেক প্রজাতন্ত্র ও পর্তুগাল সফর করেছেন। নেত্রকোণা সাহিত্য সমাজ কবি শামীম রেজাকে ২৫তম সাহিত্য উৎসবে খালেকদাদ চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার প্রদানের জন্য মনোনীত করতে পারায় গৌরব ও আনন্দ অনুভব করছে। প্রতি বছর ১ ফাল্গুন বসন্ত কালীন সাহিত্য উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে আসলেও এবার কোভিড পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকারি নির্দেশনা মেনে যথাসময়ে উৎসব আয়োজন করা সম্ভব হচ্ছে না। কোভিড পরিস্থিতি উন্নতির পর নেত্রকোণা সাহিত্য সমাজের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উৎসব আয়োজনের পরবর্তী তারিখ ঘোষণা করা হবে।
এ পর্যন্ত নেত্রকোণা সাহিত্য সমাজ কর্তৃক প্রবর্তিত খালেকদাদ চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন, যথাক্রমে—১. অধ্যাপক যতীন সরকার, ২. কবি রফিক আজাদ, ৩. কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ, ৪. অধ্যাপক কবীর চৌধুরী, ৫. কবি নির্মলেন্দুগুণ, ৬. কবি মহাদেব সাহা, ৭. নাট্যাচার্য সেলিম আলদীন, ৮. কথা সাহিত্যিক অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, ৯. কথা সাহিত্যিক রাবেয়া খাতুন, ১০. কবি হেলাল হাফিজ, ১১. বুলবন ওসমান, ১২. কবি আবু হাসান শাহরিয়ার, ১৩. আনিসুল হক, ১৪. কবি আলতাফ হোসেন, ১৫. কথা সাহিত্যিক নাসরিন জাহান, ১৬. কথা সাহিত্যিক রাহাত খান, ১৭. কবি নূরুল হক, ১৮. কথা সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, ১৯. কবি মোহাম্মদ রফিক, ২০. কথা সাহিত্যিক জাকির তালুকদার, ২১. কবি আসাদ চৌধুরী, ২২. কথা সাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, ২৩. কবি খালেদ মতিন, ২৪. প্রাবন্ধিক অধ্যাপক রফিকুল্লাহ খান, ২৫. কবি মারুফুল ইসলাম, ২৬. কবি কামাল চৌধুরী, দুইবার ২জন করে পুরষ্কার প্রদান করা হয়েছে।
কোভিড পরিস্থিতির কারণে গত বছরও উৎসব আয়োজন সম্ভব হয়নি। অধ্যাপক শামসুজ্জামান খানকে পুরস্কৃত করা সম্ভব হয়নি। এবছর তাই (২৭—২৮) দু’টি পুরস্কার একত্রে প্রদান করা হবে। এস/জ
Leave a Reply