কেন্দুয়া প্রতিনিধিঃ বাড়ি ও ফসলি জমিসহ এক একরেরও বেশি জায়গা থাকার পরও প্রভাবশালীরা তা দখল করে নেয়ায় গত ২০ বছর ধরে বাড়ি ছাড়া রয়েছেন নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার আশুজিয়া ইউনিয়নের সিংহেরগাঁও গ্রামের গিয়াস উদ্দিন মিরাশের (৫০) পরিবার। এ নিয়ে সম্প্রতি কয়েকটি দৈনিক পত্রিকা ও অনলাইন নিউজপোর্টালে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদটি স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের দৃষ্টিগোচর হলে ৫ জানুয়ারি সরজমিনে ছুটে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাবেরী জালাল। এ সময় স্থানীয় আশুজিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মঞ্জুর আলী, ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপ-সহকারি ভূমি কর্মকর্তা মোহাম্মদ গোলাম কাদের ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ উভয়পক্ষের লোকজন উপস্থিত ছিলেন।,
ইউএনও কাবেরী জালালের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর ঘটনাটি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়। এছাড়া জেলা প্রশাসন ও মানবাধিকার কমিশনও বিষয়টি সম্পর্কে অবগত রয়েছে।তিনি আরও বলেন, বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদিসহ ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকার জন্য উভয়পক্ষকে দুদিন আগে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নোটিশ প্রদান করা হয়। নোটিশ অনুযায়ী আজকে আমরা সরজমিনে গেলে গিয়াস উদ্দিন মিরাশ কিছু কাগজপত্র দেখিয়েছেন। ,
তবে প্রতিপক্ষের লোকজন কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। তাই তাদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি দেখানোর জন্য আগামী(৮ জানুয়ারি পযন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। তাই এ ঘটনায় রোববারের পর যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।আশুজিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপ-সহকারি ভূমি কর্মকর্তা মোহাম্মদ গোলাম কাদের বলেন, গিয়াস উদ্দিন মিরাশের জায়গা জমির নামজারি (খারিজ) ২০১৮ সালেই করা হয়েছে। আজকে গিয়াস তার কাগজপত্র দেখালেও অপরপক্ষের কাগজপত্রাদি ঢাকায় বলে তারা জানান। তাই আগামী রোববার দুপুরে ইউএনও স্যারের অফিসে তাদের কাগজপত্র নিয়ে যেতে বলা হয়েছে। আশুজিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মঞ্জুর আলী বলেন, নিজের জায়গা জমি থাকার পরও দীর্ঘদিন ধরে এলাকা ছাড়া রয়েছে গিয়াস উদ্দিন মিরাশের পরিবার। বিষয়টি সমাধানের জন্য আমরা অনেকবার চেষ্টা করেছি। কিন্তু স্থানীয় কিছু কুচক্রী মানুষের জন্য সেটা সম্ভব হচ্ছিল না। ইউএনও মহোদয় যেহেতু উদ্যোগ নিয়েছেন সেহেতু এবার এর একটি সমাধাব অবশ্যই হবে।,
এ বিষয়ে কথা হলে গিয়াস উদ্দিন মিরাশ বলেন, বাড়িসহ আমার নিজের ১২১ শতাংশ জায়গা জমি থাকার পরও প্রভাবশালী প্রতিবেশিরা তা দখল করে নেয়ায় গত ২০ বছর যাবত আমি পরিবার নিয়ে এলাকা ছাড়া হয়ে আছি। দিনমজুরি করে অতিকষ্টে জীবন কাটাচ্ছি। আমার এসব জায়গা জমি উদ্ধারের জন্য বহু মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। কিন্তু কোনো ফল পাচ্ছি না। বিষয়টি জানার পর কেন্দুয়ার ইউএনও স্যার আমার জন্য আল্লাহর রহমত স্বরূপ এসেছেন। এবার হয়তো আমি আমার সব সম্পদ ফিরে পাব।গিয়াস উদ্দিন মিরাশ ও স্থানীয় লোকজনসহ সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সিংহেরগাঁও গ্রামের মিয়া হোসেনের একমাত্র ছেলে গিয়াস উদ্দিন মিরাশ। মিয়া হোসেন ও মিরাজ আলী ছিলেন দুই ভাই।,
মিরাজ আলী ছিলেন নিঃসন্তান। গিয়াস উদ্দিনের বাবা মিয়া হোসেনের মৃত্যুর পর ওয়ারিশান সূত্রে তিনি ৬০ শতাংশ পৈত্রিক ভূমি এবং চাচা মিরাজ আলীর সম্পদ থেকে ৬১ শতাংশসহ মোট ১২১ শতাংশ বাড়ি ও জমি প্রাপ্ত হন। তবে নিরীহ মিয়া হোসেনের জীবদ্দশাতেই তার জায়গা জমি দখলের পাঁয়তারা করে আসছিল প্রভাবশালী প্রতিবেশি নাবালক ফকির ও আল আমিন গংরা। একপর্যায়ে মিয়া হোসেনের মৃত্যুর পর তার ছেলে নিরীহ গিয়াস উদ্দিনের বাড়িসহ সব জায়গা জমি দখল করে নেন প্রতিপক্ষের লোকজন।,
এরপর থেকেই প্রাণভয়ে পরিবারসহ বাড়ি ছাড়া হন গিয়াস উদ্দিন। তারপর কখনও ঢাকায় আবার কখনওবা আত্মী-স্বজনের বাড়িতে আশ্রিত থেকে দিনমজুরি করে জীবন চালিয়ে আসছেন। বর্তমানে তিনি পূর্বধলা উপজেলার শ্বশুরবাড়িতে আশ্রিত হয়ে বসবাস করছেন। গিয়াস উদ্দিন তার দখলকৃত জায়গা জমি ফেরত চাইতে গেলেই দখলকারীরা তাকে নানাভাবে হুমকি দেন। এ অবস্থায় এলাকার লোকজনের দ্বারে দ্বারে ধরনা দিয়েও তার সহায় সম্পদ উদ্ধার করতে পারছেন না।
Leave a Reply