বিশেষ প্রতিনিধি : নেত্রকোনার আটপাড়ায় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতে দুই শিক্ষককে অপহরণ করার অভিযোগ উঠেছে। গত বুধবার উপজেলার নারাচালত এলাকায় তাদের অপহরণ করা হয়। অপহরণ করা ২ শিক্ষক হলেন— উপজেলার খিলা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ইমন চন্দ্র পাল ও শাকিল আহমেদ। তারা দুজনই ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনের ভোটার (টিআর) সদস্য। স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি প্রার্থী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা তানভীর আহমেদের বিরুদ্ধে ওই শিক্ষকদের অপহরণ করে নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার অভিযোগ উঠেছে। অপহরণকালে তার সঙ্গে নির্বাচিত দুই অভিভাবক সদস্য সোহেল মিয়া ও মঞ্জুরুল হক ছিলেন বলেও জানা গেছে। তবে তানভীর আহমেদ তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। জানা যায়, গত বুধবার বেলা ১২টায় খিলা উচ্চ বিদ্যালয়ে সভাপতি নির্বাচনে সভা হওয়ার দিন নির্ধারণ করা ছিল। সভার আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নেত্রকোনা থেকে স্কুলে আসার পথে উপজেলার নারাচালত এলাকায় ওই দুই শিক্ষককে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।..
একটি ঘরে আটকে রেখে বিকাল ৩টার দিকে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। এতে তারা উপস্থিত না হতে পারায় সভা পণ্ড হয়ে যায়। অপহৃত শিক্ষক ইমন চন্দ্র পাল বলেন, স্কুলের সভায় আসার জন্য আমরা চারজন শিক্ষক নেত্রকোনা থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশাযোগে রওনা হই। উপজেলার নারাচাতল এলাকায় পৌঁছলে ৪-৫টি মোটরসাইকেলে করে তানভীর আহমেদ, অভিভাবক সদস্য সোহেল মিয়া ও মঞ্জুরুল হকসহ ১২-১৪ জন আমাদের পথরোধ করে। এক পর্যায়ে সিএনজি থেকে আমরা ভোটার দুইজন শিক্ষককে টেনেহিঁচড়ে তুলে নিয়ে যায়। এতে শিক্ষক শাকিল আহমেদের পা ভেঙে যায়। তারা আমাদের নানা ভয় ভীতি দেখিয়ে আটপাড়া শহরের কাছে একটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে আটকে রাখে। পরে বিকেল ৩টার দিকে জেলা শহরের কাছে নিয়ে ছেড়ে দেয়। অপহৃত অপর শিক্ষক শাকিল আহমেদের মোবাইল বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। প্রত্যক্ষদর্শী খিলা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আনিছুর রহমান বলেন, ওই সিএনজিতে আমিও ছিলাম। ,.
পথরোধ করে ভোটার দুই শিক্ষককে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায়। পরে তাদের আটকে রেখে বিকেলে ছেড়ে দেয়। বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, খিলা উচ্চ বিদ্যালয়ে দুই বছর মেয়াদী ম্যানেজিং কমিটি গঠনের লক্ষ্যে গত পহেলা এপ্রিল চারজন পুরুষ অভিভাবক সদস্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া একজন সংরক্ষিত মহিলা সদস্য, একজন দাতা সদস্য ও দুইজন শিক্ষক সদস্যসহ মোট ৮ সদস্য নির্বাচিত হন। তারা মিলে সভাপতি নির্বাচিত করবেন। ৩ এপ্রিল সভা করে সভাপতি নির্বাচিত করার সিদ্ধান্ত হয়। তবে কমিটির অধিকাংশ সদস্য অনুপস্থিত থাকায় কোরাম সংকট দেখা দেয়। পরে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিলুফার ইয়াসমিন নিপা গিয়ে সভা স্থগিত করেন।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের সভাপতি আবু সাইদ বলেন, দুই শিক্ষককে অপহরণ করা হয়েছে বলে জেনেছি। এটা খুবই দুঃখজনক। তারা উপস্থিত না হতে পারায় কোরাম পূর্ণ হয়নি। ফলে আর সভাপতি নির্বাচন হয়নি। বিদ্যালয়ের সামনে থাকা সার-বীজ ব্যবসায়ী ও বিদ্যালয়ের জমি দাতা অলি মিয়া বলেন, আবু সাইদ দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ের সভাপতি পদে আছেন। তিনি খুবই সৎ ও ভালো মানুষ। বিদ্যালয়ের অনেক উন্নয়ন তার হাত ধরে হয়েছে। শিক্ষক -শিক্ষার্থীর ভালো-মন্দ বিপদে-আপদে তিনি পাশে থাকেন। এলাকাবাসী, অভিভাবক ও শিক্ষকরা তাকে পছন্দ করেন। ওই শিক্ষকরা তাকে সমর্থন দিবেন এই ধারণা থেকেই তানভীর আহমেদ তাদের অপহরণ করেছেন বলে জেনেছি। একই কথা বলেন খিলা গ্রামের আল মামুন। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তানভীর আহমেদ বলেন এসব অভিযোগ মিথ্যা ও হাস্যকর।
অপহরণের বিষয়ে কিছুই আমার জানা নেই। তবে অভিযুক্ত দুই অভিভাবক সদস্যর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিলুফার ইয়াসমিন নিপা বলেন, সভা হওয়ার কথা থাকলেও ১টা পর্যম্ত অধিকাংশ সদস্য অনুপস্থিত থাকায় সভা স্থগিত করা হয়। এক সপ্তাহের মধ্য নতুন করে সভার তারিখ নির্ধারণ করা হবে। তবে দুই শিক্ষকের অপহরণের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে জানি না।এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক খায়রুল ইসলামের মোবাইলফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
Leave a Reply