বিশেষ প্রতিনিধি ঃ-চলমান বন্যায় নেত্রকোনার রাস্তা, ব্রীজ, কালভার্ট, কৃষি, প্রাণি সম্পদ এবং মৎস্য খাতে ইতিমধ্যে দুই শত কোটিরও বেশি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি করা জরিপে জানা গেছে, এবারের বন্যায় নেত্রকোনা সদর, দুর্গাপুর, কলমাকান্দা, খালিয়াজুরী, বারহাট্টা, মদন, মোহনগঞ্জ, কেন্দুয়া, আটপাড়া ও পুর্বধলা উপজেলার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি), কৃষি, মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ বিভাগে ওই ক্ষতি হয়। এছাড়া, এবার বন্যার পানিতে ডুবে জেলায় মারা গেছে ৬ জন।নেত্রকোনা এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুর রহিম বলেন, চলমান বন্যায় নেত্রকোনার ১০টি উপজেলার রাস্তা, ব্রীজ, কালভার্ট ভেঙে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৯৩ কোটি টাকার। নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শাহজান সিরাজ জানান, এ জেলায় ৪৮৬ হেক্টর জমির আউস ধান, ৫৮৮ হেক্টর জমির সবজি ও ১৩৬ হেক্টর জমির পাট ক্ষতি হয়েছে। এসবের অর্থমূল্য ৩০ কোটি ৫৯ লাখ টাকা প্রায়।
জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. শহিদুল্লাহ জানান, জেলায় এ বিভাগে ক্ষতি হয়েছে ১৬ কোটি ৭ লাখ টাকার। ক্ষতিসমূহের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ধরন হলো গবাদিপশু-হাঁস-মুরগি অল্প দামে বিক্রি করা, ঘাস, খর ও গোয়াল ঘর বিনষ্ট হওয়া।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহজাহান কবীর জানান, নেত্রকোনা জেলায় বিভিন্ন পুকুর থেকে চাষের মাছ ভেসে গিয়ে ১১ কোটি ৫৭ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এখানকার ক্ষতিগ্রস্ত মাছ চাষির সংখ্যা ১৫ হাজার ৮২৬ জন।নেত্রকোনায় এলজিইডি, সড়ক জনপথ ও স্থানীয় সরকারের অধীনে সড়কগুলো ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী প্রায় ৫০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে, জেলা ত্রাণ ও পুনবাসন কর্মকর্তা মো. রুহুল আমীন জানান, ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানির ফলে নেত্রকোনায় বন্যা দেখা দেয় গত ১৭ জুন। এখনো চলমান এ বন্যায় নেত্রকোনার ১০টি উপজেলার ৬১টি ইউনিয়নে পানিবন্দি হয় ৩০ হাজার ৪০৫টি পরিবার। এসব পরিবারের ক্ষতিগ্রস্ত লোক সংখ্যা হলো ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৫৫০ জন। জেলায় চলমান বন্যার পানিতে ডুবে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের একজন শিশু. ২ জন নারী ও ৩ জন পুরুষ। তাদের মধ্যে কেন্দুয়া উপজেলায় ৩জন, দুর্গাপুর উপজেলায় ২জন ও মোহনগঞ্জ উপজেলায় ১জন।তিনি আরো জানান, এ বন্যায় নেত্রকোনা জেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কলমাকান্দা, দুর্গাপুর ও খালিয়াজুরী উপজেলায়।
বিশেষ করে কলমাকান্দা ও দুর্গাপুর উপজেলায় পাহাড়ি ঢল নেমে হঠাৎ করে বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে সেখানকার রাস্তা-ঘাটসহ ঘর-বাড়ি। বন্যা কবলিত প্রায় সবটি উপজেলায় খাবার ও বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দিয়েছে বলেও জানান তিনি।নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিস জানান, বন্যার্তদের জন্য ইতিমধ্যে এখানকার ১০টি উপজেলায় বিতরণ করা হয়েছে ৭৯৮ মেট্রিক টন জি আর চাল, নগদ ১ কোটি ৩ লাখ টাকা ও ৭১৫০ প্যাকেট শুকনো খাবার।এবারের বন্যায় জেলায় ব্যাপক ক্ষতি হলেও এখানকার ঘর-বাড়ি ও আসবাবপত্রের ক্ষয়-ক্ষতির পরিমান এখনো চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি বলেও জানান তিনি।
Leave a Reply