সাকুরা কনক ,সহকারি শিক্ষিকা মাইলোড়া সরকারী প্রথমিক বিদ্যালয়,মোহনগঞ্জ নেত্রকোনা ।
মানুষের পৃথিবীকে জানবার ও বুঝবার ইচ্ছে থেকে বিজ্ঞানের উৎপত্তি। শিশুদের মধ্যে জানবার ইচ্ছে অত্যন্ত প্রবল। তাদের কাছে প্রত্যেকটি জিনিসই নতুন ও বিস্ময়কর। সৃষ্টির ভিত্তি ইচ্ছে কৌতুহল। এই কৌতুহল ইচ্ছে শিশুদের সহজাত ধর্ম। কথা বলতে সক্ষম হওয়ায় আগেই শিশুর মনে কৌতুহলের জন্ম,এমনকি হামাগুড়ি দিতে পারার আগে। সামনে বাক্সের মতকিছু পেলেতার ভিতরে ঢুকবে, আবার তা থেকে বেরিয়ে দেখবে, তার উপর চড়ে বসবে নাগালের মধ্যে যা কিছু পাবে তাই ধরতে চেষ্টা করবে, ভাঙতে চেষ্টা করবে। এসব কাজের পিছনে রয়েছে শিশু মনের অনুসন্ধান স্পৃহা। একজন বয়স্ক মানুষের চেয়ে শিশু অনেক বেশি পরিশ্রমী। যে হামাগুড়ি দিতে শিখেছে, বসতে শিখেছে, সে ভালো মন্দ বুঝতে শিখেছে। প্রতি মুহুর্তে যে পর্যবেক্ষণ তার চারদিকের অবস্থান মধ্যে দিয়ে অভিজ্ঞতার ভান্ডারকে বিকশিত করছে, প্রতিদিন প্রতিমুহূর্ত। শিশুর মধ্যে কৌতুহল জাগানো, কল্পনা সৃষ্টি করা, এক কথায় সুন্দর জীবন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অভিভাকদের ভূমিকা সব সময় বেশি।
এ প্রসঙ্গে নোবেল পুরস্কার প্রাপ্ত ড. হ্যারন্ড ইউরি অভিমত প্রকাশ করেন যে, প্রতিভাবান শিশুর সংখ্যা কম হলেও অনেকের মধ্যে ইচ্ছে করে তা হলে ক্ষুদ্র স্কুলিঙ্গটিকে অগ্নিকুন্ডে পরিনত করতে পারেন অথবা অবহেলা করলে এই স্কুলিঙ্গটিকে নিভিয়ে দিতে পারেন। শিশুর এই গুনকে আমাদের সবার সযন্তে লালন করা উচিত।শিশুর ভিতরে যেন ভয়, কুসংস্কাার যেন প্রবেশ করতে না পারে সে বিষয়ে অভিভাবকদের খেয়াল রাখতে হবে। পিতামাতা যদি ছেলে মেয়েদের সমস্যার অংশীদার হন, তা হলে তারা অনেক বিষয়ে শিক্ষা লাভ করতে পারেন। একটা সুন্দর ফুল হাতে নিয়ে কিংবা ছোট গাড়ি হাতে হাতে পেলে আকাশে এরোপ্লেন দেখে তার কৌতুহল শেষ হয়ে যায় না। প্রথমে এটা সেটা বলাবলি করে। তারপর নানা প্রশ্ন সে শুরু করে। তবে শিশুকে কোনো সময়েই বুঝতে দেয়া উচিত নয় যে, আমরা তার প্রশ্নের উত্তর দিতে অনিচ্ছুক। এতে তার চিন্তা শক্তি বাধা প্রাপ্ত হয়। কিংবা সে কৌতুহল নিবারনের জন্য অন্যের দারস্থ হয়। যার মধ্যে কৌতুহল ও কল্পনা নেই তার অলস হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। শিশুর জীবনে সাফল্যেও আনন্দ বিশেষ গুরুত্বপূর্ন। এ প্রসঙ্গে ড. হ্যারল্ড ইউরি বলেছেন, আমাদের জীবনের এক স্তরে ’বিড়াল ’ শব্দটি বানান করা ও একটি বিরাট সাফল্য এবং বেশ আনন্দদায়ক। শিশুদের প্রশ্ন জিজ্ঞাসার কোনো সময় অসময় নেই। আবার কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে আগ্রহ দীর্ঘস্থায়ী হয় না। আজ তার কাছে সেটা আকর্ষনীয় আগামীকাল তার কাছে সেটা অত্যন্ত বিরক্তিকর। শিশুরা কাগজের উপর রং দিয়ে নানা প্রকার আকৃতি অঙ্কন করতে পছন্দ করে। এ সময় তাদের কোনো নির্দিষ্ট চিত্র অঙ্কন করতে বাধ্য করা উচিত নয়। অবশ্য যে সময় তারা একটি ছবি বার বার আঁকে তখন নানা রকম প্রশ্ন করা উচিত।
’তোমার বাড়ির পাশের রাস্তাটি কেমন হবে ? রাস্তার দুই পাশে কী থাকবে ? এতে শিশু অন্যান্য চিত্র আঁকার ইঙ্গিত পাবে ।পাঁচ বছর বয়স শিশুদের জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন সময়। শিশু যখন ছোট থাকে তখন শিশুদের নিয়ন্ত্রন করতে অভিভাবকরা তৎপর হয়ে উঠেন। ফলে নানা ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা থেকে শিশুর সামগ্রিক বিকাশে বাধাগ্রস্থ হয়। এ কথা আমাদের ভুললে চলবে না শিশুর জগৎ ও পরিবেশ জানার অদম্য আগ্রহ ও চেষ্টা তার শিক্ষা জীবনের দ্বার উৎঘাটন করবে। স্বাভাবিক ভাবেই তিন বছর থেকে সে যে প্রশ্ন করতো এখন কার প্রশ্ন তার চেয়ে বেশী যুক্তিপূর্ন ও বস্তুনির্ভর। শিশু যখন ছোট থাকে তখন তার সবকিছুই মা- বাবার ভালো লাগে। কিš‘ সে যখন ধীরে ধীরে বড় হয় ও স্বাবলম্বী হয়ে উঠে। তখন মা- বাবা শিশুদের নিয়ন্ত্রন করতে তৎপর হয়ে উঠেন। ফলে নানা ধরনের অপ্রতিকর ঘটনা ঘটে। এবং শিশুর সামগ্রিক বিকাশ বাধাগ্রস্থ’ হয়। একথা আমাদের ভুললে চলবে না সে জগৎ ও পরিবেশকে জানার অদম্য আগ্রহ ও চেষ্ঠা তার শিক্ষা জীবনের দ্বার উৎঘাটন করে। কাজেই তার সাথে সহজ ও সুষ্পষ্ঠভাবে কথা বলতে হবে। তার প্রশ্নকে অবহেলা না করে জবাব দিতে হবে এ বয়সে তাকে কথা বলার সুযোগ করে দিতে হবে। শিশু যখন অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি ছড়া ,গল্প, কবিতা পড়তে খুবই পছন্দ করে তখন সে কৌতুহলের সাথে আরও পড়তে চায়। এই কারনে শিশুর জন্য বই নির্বাচনের সময় তার বয়স, দক্ষতা ও কৌতুহল সম্পর্কে আমাদের ভালো করে জানা দরকার এবং সে ব্যাপারে পর্যবেক্ষন করে শিশুকে বই প্রদান করতে হবে।এ জন্য শিশুর জীবন গঠনে অভিভাবকদের দায়িত্ব , কর্তব্য অনেক গভীর ও বিস্তৃত। শিশুরা অন্ন, বশ্র, চিকিৎসার উপর বেঁচে থাকতে পারে না। তাদের জন্য খেলনা চাই , সাংস্কৃতিক পরিমন্ডল চাই, বই চাই, চাই সুন্দও পরিবেশ। এক কথায় আনন্দময় শৈশব চাই। তাই শিশুর ছোট খাটো ভুল ত্রুটিকে দেখতে হবে উদার দৃষ্টিতে। শিশুর প্রতি একটা সম্মানবোধ থাকা উচিত। তা হলে গড়ে উঠবে শিশুর সুন্দর জীবন।
Leave a Reply