মোহনগঞ্জ সংবাদদাতা।নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে প্রতারণা করে মৃত ব্যক্তিদের দিয়ে সমিতি গঠন করে সেই সমিতির নামে জলমহাল ইজারা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।এছাড়া জলমহালের কাছের সমিতিকে দূরের দেখিয়ে দূরের সমিতিকে ইজারা দেয়ার অভিযোগও উঠেছে সংশ্লিষ্ঠদের বিরুদ্ধে।এমন অভিযোগে জেলা প্রশাসক ও জেলা সমবায় কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী দত্তখিলা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি মো. বকুল মিয়া। অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, মোহনগঞ্জ উপজেলার দত্তখিলা জলমহালটির আয়তন ১৯.৫৫ একর।
চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি ইজারার জন্য দরপত্র আহ্বান করে প্রশাসন। জলমহালের নিকটবর্তী সমিতিকে ইজারা প্রাপ্তির যোগ্যতা হিসেবে ধরা হয়। দরপত্রে দত্তখিলা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি, জলের ঢেউ মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডসহ চারটি সমিতি অংশ নেয়। উপজেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা ও ইজারা কমিটি নির্দেশে সর্ভেয়ার মেপে দত্তখিলা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতিকে জলমহালের নিকটবর্তী পেয়ে তাদের ইজারা দেয়া হয়। পরে জলের ঢেউ মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের দপ্তরে আপিল করে।
জেলা থেকে সার্ভেয়ার গিয়ে পুনরায় মাপ দিয়ে জলের ঢেউ মৎস্যজীবী সমবায় সমিতিকে নিকটবর্তী উল্লেখ করে। এতে তারা ইজারা পেয়ে যায়। এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দত্তখিলা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি বিভাগীয় কমিশনারের দপ্তরে আপিল করে। কিন্তু বিভাগীয় কমিশনার জেলা প্রশসানের সিদ্ধান্ত বহাল রাখে। এদিকে জলের ঢেউ মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি ২০২০ সালের ২৯ অক্টোবর নিববন্ধন পায়। কিন্তু ২০ সদস্যর ওই সমিতির একজন জন সদস্য নিচকী গ্রামের মিরাজ আলী ২০১৯ সালের ৮ ডিসেম্বর মারা যায়।
অপর সদস্য ঝিমটি গ্রামের শহীদ আলম শাহ ২০১৮ সালের ১১ জুলাই মারা যান। সমিতি নিবন্ধনের দুই বছর আগেই দুই সদস্য মারা গেলেও এখনো সমিতির তালিকায় তারা জীবিত। মৃতদের দিয়ে সমিতি গঠনের অনিয়মের বিষয়টিকেও প্রতারণা বলে উল্লেখ করা হয়। দত্তখিলা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি মো. বকুল মিয়া বলেন, প্রথম মাপে আমার সমিতি নিকটবর্তী বলেও পরের মাপে দূরবর্তী হলো কি ভাবে। বিষয়টি বুঝলাম না। এছাড়া মৃতদের নামে নিবন্ধন হওয়া জলের ঢেউ সমিতি ইজারা কার্যক্রমে অংশ নিতে পারে না। ।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা ও ইজারা কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), সদস্য সচিব সহকারী কমিশনার (ভূমি), মৎস্য কর্মকর্তা ও সমবায় কর্মকর্তাসহ বেশ কয়েকজন সদস্য রয়েছে। এছাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান এ কমিটির উপদেষ্ঠা। কমিটির সম্মতিতেই জলমহাল ইজারা দেয়া হয়। মোহনগঞ্জের জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ বলেন, মৃত ব্যক্তিদের নাম ব্যবহার করে মৎস্যজীবী সমিতি গঠন করা অনিয়ম। সমিতি গঠন করার সময় সকল সদস্যর একাধিক কাগজে স্বাক্ষর করতে হয়।
তারা তাহলে স্বাক্ষর কিভাবে করল। প্রথমে দুই সমিতির কার্যালয় থেকে মাপ দেয়া হয়েছিল। তখন দত্তখিলা সমিতি নিকটবর্তী হওয়ায় ইজারা পেয়েছিল। তবে দুই সমিতিই একে অপরের বিরুদ্ধে সমিতির নিদৃষ্ট কার্যালয় সরিয়ে নিয়ে নিকটবর্তী দেখানোর বিষয়ে অভিযোগ করেছিল। পরে অন্য সমিতি জেলায় আপিল করে। পরবর্তীতে মনে হয় সমিতির সদস্যদের বাড়ি থেকে দূরত্ব মাপ দেয়া হয়েছে। এতে জলের ঢেউ ইজারা পায়। উপজেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা ও ইজারা কমিটির সদস্য সচিব সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ইজারায় অংশগ্রহণের জন্য আমরা সমবায় থেকে সমিতির প্রত্যয়ন চাই। প্রত্যয়ন সন্তোষজনক হলে সেই সমিতির কার্যক্রম চলমান বলে ধরে নেয়া হয় ।
মৃতদের কমিটি দিয়ে প্রত্যয়ন দিয়ে থাকলে সেই দায় তাদের ওপর বর্তাবে। তবে জলমহালটি নিয়ে আপিল হয়েছে। আপিলের বিষয় নিয়ে কথা বলা ঠিক হবে না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যেটা সঠিক মনে করেছেন সেটাই রায় দিয়েছেন।উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ছাব্বির আহমেদ আকুঞ্জি বলেন, এ জলমহালটি নিয়ে আপিল হয়েছে। আপিলের রায়ই চুরান্ত থাকবে।জেলা সমবায় কর্মকর্তা সুমন চন্দ্র পাল বলেন, মৃত ব্যক্তিদের সদস্য করে সমিতি নিবন্ধন দেয়া অনিয়ম। এমন অভিযোগ পেয়েছি।
একজন কর্মকর্তাকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তদন্ত শেষে এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Leave a Reply