পূর্বধলা প্রতিনিধি: নেত্রকোনার পূর্বধলায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে’র সেকেন্ডারী এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামে’র সহযোগিতায় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের আয়োজনে গত ১৮ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়ে পূর্বধলা জগৎমণি সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ভ্যেনুতে সাতদিন ব্যাপী এ প্রশিক্ষণ ২৮ ডিসেম্বর শেষ হয়। ,
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের তথ্য মতে উক্ত প্রশিক্ষণে উপজেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৪১টি, দাখিল মাদ্রাসা ১৪টি ও ৫টি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মোট ৫৬৭জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ১০টি বিষয়ের উপর প্রশিক্ষণ নেন। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের তত্ত¡াবধানে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের উপর ৩৩জন মাষ্টার ট্রেইনার প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। এবং ১৩ জন সার্পোট সার্ভিসের (এমএলএসএস) প্রশিক্ষনে সহযোগিতার কাজে নিয়োজিত ছিলেন প্রশিক্ষনের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিক, ও একাডেমিক সুপারভাইজার আব্দুল লতিফ মাসুদ। ,
প্রশিক্ষণ চলাকালীন অংশগ্রহণকারী শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মাঝে ভাতার টাকা প্রত্যেকের ব্যাংক একাউন্টে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এখানে ৫৮৪ জন শিক্ষকের প্রশিক্ষণ নেয়ার বরাদ্ধ ছিল কিন্তু অজানা কারনে ১৭ জন বাদ দিয়েই প্রশিক্ষণ করানো হয়েছে। এমএলএসএসরা জানান,সার্পোট সার্ভিসের স্টাফের ভাতা বিতরণ ফরমে জাল স্বাক্ষর করে অফিস কতৃপক্ষ বিল জমা দেন। এবং টাকা উত্তোলন করে নিয়ে গেছে। কিন্তু কে এই জাল স¦াক্ষর করে জমা দিয়েছে, কারাই বা টাকা উত্তোলন করেছেন কেউ জানেন না । ,
তাদের ২/১ জন স¦াক্ষর না দিয়েই ৫ শত বা ১ হাজার টাকা করে নগদে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারি জালাল এর নিকট থেকে পেয়েছেন বলে জানান। এই নিয়ে এমএলএসএসদে’র মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। ফলে বিভিন্ন বিদ্যালয় ও অফিসে’র এমএলএসএস ১৩ জনের জন্য বরাদ্দকৃত ৭৫ হাজার ৯২০ টাকা আত্মসাত হয়ে গেল, কেউ জানতেও পারলাম না।
প্রশিক্ষণে সার্পোট সার্ভিসে নাম থাকা পূর্বধলা উচ্চ বিদ্যালয়ে’র এমএলএসএস আব্দুল হেলিম বলেন, শিক্ষা বিস্তরন প্রশিক্ষণ কাজে সহযোগিতার জন্য আমার নাম ছিল যা আমার জানা ছিল না। আর সরকারিভাবে কত টাকা বরাদ্দ ছিল তাও আমার জানা নেই। তবে ভাতার সিটে আমার জাল স্বাক্ষর নামসহ দেখে অবাক হয়েছি। ১৩ জনের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে ফরমাইয়েছি কাজ করা মো. রুহুল আমীনকে এমএলএসএস পদ দেখানো হয়েছে প্রকৃত পক্ষে তার কোনো চাকুরী নেই।
ঠিক একই ভাবে পূর্বধলা জগৎমণি সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সুস্মিতা দত্ত ও খুশি দত্ত স্বামী স্ত্রী তাদেরও বিদ্যালয়ে কোনো চাকুরী নেই। অপর দিকে পূর্বধলা বালিকা বিদ্যালয়ে’র ফরিদা আক্তার আয়া ও একই বিদ্যালয়ে’র এমএলএসএস আব্দুল করিম বলেন, আমাদের নামে ৫ হাজার ৮শ ৪০ টাকা করে জাল স্বাক্ষর করে ভাতা উত্তোলন করেছেন উপজেলা শিক্ষা অফিস, যা আমরা জানি না। অন্যেরা বলেন কোথাও স্বাক্ষর দেইনি তবে কিছু টাকা দিয়েছে, কেন দিয়েছে জানি না।
পূর্বধলা বালিকা বিদ্যালয়ে’র প্রধান শিক্ষক আসলাম মিয়া বলেন, প্রশিক্ষণের কাজের জন্য আমার কোনো এমএলএসএসকে ডেপুটেশন দেয়নি। এদের নামে টাকা উত্তোলনের বিষয়টি আমি শুনেছি। প্রশিক্ষণের ভেন্যু পূর্বধলা জগৎমণি সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাবুল চন্দ্র সরকার বলেন, আমাকে কোনো ধরনের ভাড়ার টাকা পরিশোধ করা হয়নি। আমি জানি ভাড়া বাবদ ৭৭ হাজার টাকা বরাদ্ধ রয়েছে। অথচ রুম, সাউন্ড সিস্টেম, প্রজেক্টর সহ সব কিছু বিদ্যালয় থেকে সুবিধা দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবু বকর সিদ্দিক বলেন, প্রশিক্ষণের ভেন্যুর ভাড়ার বিষয়টি কোনো সমস্যা নয় ঠিকই আছে। তিনি বলেন সরকারি বিদ্যালয়ে ভাড়া প্রদানের কোনো বিধান নেই।
আর প্রশিক্ষণে সার্পোট সার্ভিসে নিয়োগকৃতদের টাকা সমন্বয় করার জন্য এ কাজাটি করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবারের ৭দিনের প্রশিক্ষণে প্রত্যেক প্রশিক্ষনার্থীকে ভ্যাট ও আইটি কর্তন করে ৭ হাজার ২৪০ টাকা করে দেয়া হয়েছে। আর একজন প্রশিক্ষককে ভ্যাট আইটি কর্তন ছাড়া দেয়া হয়েছে ১৮ হাজার ১৬০টাকা করে । একজন প্রশিক্ষনার্থী ও একজন প্রশিক্ষকের ভাতার এমন বিস্তর ব্যবধানেও শিক্ষকগণের অসন্তোষ্টি রয়েছে। নাম প্রকাশ না করে অনেক শিক্ষক জানিয়েছেন একজন প্রশিক্ষককে একজন প্রশিক্ষনার্থীর চেয়ে প্রায় ১১ হাজার টাকা বেশি দেয়া হয়েছে। যা একেবারে চরম বৈষম্যের শামিল। বিষয়টি মেনে নেওয়ার মত না হলেও মেনে নিতে হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক প্রশিক্ষনার্থী বলেন,হোল্ডার, কলম, পেড প্রতি জনের জন্য বরাদ্ধ ছিল ২শ টাকা করে সেখানে মাত্র ১ শ টাকা ব্যয়ে নি¤œমানের উপকরণ দেয়া হয়েছে। আরো বলেন, এখানে সব মিলিয়ে প্রায় ৩ লক্ষের মতো টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিস সুত্রে জানা যায় শিক্ষক প্রশিক্ষণ পরিচালনার ব্যয় নির্বাহের জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোট বরাদ্ধ ৫৫ লক্ষ ২৪ হাজার ৪ শ ৮০ টাকা থেকে অগ্রিম বাবদ ৫৩ লক্ষ ১২ হাজার ৫শ ৬০ টাকা উত্তোলন করেছেন যা সমন্বয় যোগ্য।
জেলা শিক্ষা অফিসার মো.জোবায়ের ছাইদ বলেন, প্রশিক্ষণ চলাকালিন সময়ে আমি নেত্রকোনায় ছিলাম না যে কারণে সবগুলি বিষয় আমার জানা নেই। বিস্তারিত জেনে পরবর্তিতে সব কিছু জানাতে পারবো। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. খবিরুল আহসান বলেন, এ বিষয়ে আমি বিস্তারিত অবগত না তবে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারে’র সাথে কথা বলে বিস্তারিত জানাতে পারবো।
Leave a Reply