রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫, ০৬:৫৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
কেন্দুয়ায় ইট ভাটা চালু রাখার দাবিতে সমাবেশ ও স্মারকলিপি প্রদান খালিয়াজুরীতে উপজেলা ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত কেন্দুয়ায় রোয়াইলবাড়ি আমতলা ইউনিয়ন ছাত্রদলের প্রতিবাদ মিছিল পার্থ ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়াতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত খালিয়াজুরীতে বাবরের গণ সংবর্ধনা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত কেন্দুয়া সরকারি কলেজে পরীক্ষার সময়সূচী আকস্মিক পরিবর্তন : বিপাকে পরীক্ষার্থীরা খালিয়াজুরীতে ইয়াবা ব্যবসায়ী গ্রেফতার মোহনগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি দোহা, সম্পাদক কামরুল কলমাকান্দায় বিদ্যালয়ের শিশু শিক্ষার্থীদের দিয়ে মাটি কাটানোর অভিযোগ নেত্রকোণা বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ণিল আয়োজনে বসন্তবরণ

মোহনগঞ্জ শহীদ স্মৃতি মহাবিদ্যালয়ে ২ শিক্ষার্থীকে পাঠদানে ৮ শিক্ষক

রিপোর্টারের নাম:
  • আপডেট : মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৪
  • ২৭৩ পঠিত

বিশেষ প্রতিনিধি: নেত্রকোনার মোহনগঞ্জের আদর্শ নগরে ‘শহীদ স্মৃতি মহাবিদ্যালয়ে’ বিজ্ঞান ও বাণিজ্য বিভাগে একজন করে মোট দুইজন শিক্ষার্থী রয়েছে। ওই দুই বিভাগে তাদের পড়াশোনা করানোর জন্য শিক্ষক রয়েছেন চারজন করে মোট আটজন। উচ্চ মাধ্যমকি পর্যন্ত এমপিওভুক্ত ওই প্রতিষ্ঠানের ৮ জন শিক্ষকের বেতন ভাতা বাবদ সরকারের প্রতি বছরে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ২৭ লাখ টাকা। যদিও এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী প্রতি বিভাগে ন্যূনতম ২৫ জন শিক্ষার্থী থাকা আবশ্যক। শিক্ষার্থীরাও একা একা ক্লাসে আগ্রহ না পাওয়ার কারণে তারাও আসে না নিয়মিত।

কলেজ সূত্রে জানা গেছে, বিভাগ, জেলা ও উপজেলায় গত কয়েক বছর ধরে সেরা কলেজের স্থান দখল করে রেখেছে ‘শহীদ স্মৃতি মহাবিদ্যালয়’। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত অনুমোদন পাওয়া কলেজটিতে ২০২৪ শিক্ষা বর্ষে মানবিক শাখায় রয়েছে প্রায় ১৫০ জন শিক্ষার্থী। আর বিজ্ঞান ও বাণিজ্য শাখায় একজন করে দুইজন শিক্ষার্থী রয়েছে। এছাড়া কলেজটিতে রয়েছে কারিগরি (বিএম) শাখা। কারিগরিতে ২০০ শিক্ষার্থী রয়েছে। কলেজ সূত্রে আরও জানা গেছে, জেলার হাওরাঞ্চল উপজেলার ৬ নং সুয়াইর ইউনিয়নের ছেছড়াখালী বাজার সংলগ্ন ১৯৯৪ ইং ছেছড়াখালী মহাবিদ্যালয় নামে প্রথমে কলেজ স্থাপন করা হয় । আরও জানা যায় ১৯ ৯৬ ইং সালে কয়েকজন পরীক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলেন । ঐ সময়ে কলেজ উন্নয়নে এমপি লুৎফুজ্জামান বাবার সাহেব ৭৫ হাজার টাকা অনুদান দিয়েছিলেন । কলেজের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে ।

১৯৯৯ ইং ডাঃ আকলাকুল হোসাইন আহমেদ এলাকাবাসী নিয়ে বৈঠক করেন । ঐ সময়ে কমিটির লোক ৫০০ , অন্যান্য লোকজন ৩০০ টাকা করে টাকা দেন । এরপর ও কলেজ টির তেমন অগ্রগতি হয়নি । ২০১৫ সালে সম্ভবত মে মাসে একটি কোচিং সেন্টারে ছেছড়াখালী মহাবিদ্যালয় পূর্ণ গঠন করার জন্য একটি সভা হয়। ঐ সভায় এলাকার কৃতি সন্তান প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব সাজ্জাদুল হাসানের সাথে যোগাযোগ করার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয় । ঢাকায় গিয়ে এলাকার লোকজন প্রথমে সাজ্জাদুল হাসান ও পরবর্তীতে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান এর সাথে কলেজ বিষয়ে আলোচনা করেন । আলোচনায় কলেজের নাম পরিবর্তন ও সাজ্জাদুল হাসানকে প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে নামের প্রস্তাব আসে । ঢাকায় এলাকাবাসীর প্রতিনিধিগণ সর্বসম্মতিক্রমে উপস্থিত সবাই সম্মতি প্রকাশ করলে সাজ্জাদুল হাসান কলেজ স্থাপনের বিষয়ে রাজি হন । কলেজের নাম শহীদ স্মৃতি মহাবিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠাতা সাজ্জাদুল হাসান এর নাম দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উন্নয়ন কাজ শুরু হয় । এরপর থেকে রাতারাতি কলেজের পরিবর্তন শুরু হয় । উক্ত জায়গার সাথে জমি ক্রয় শুরু হয় এবং অবকাঠামো শুরু হয় । জমি ক্রয় করে ওয়াল দেওয়া হয়। আবার জমি ক্রয়ের পর ওয়াল ভেঙ্গে আবার নতুন ওয়াল দেওয়া হয় । আদর্শনগর বাজারের পাশে সাড়ে ৫ একর জায়গায় ২০১৫ সালে নতুন নামে স্থাপিত হয় ‘শহীদ স্মৃতি মহাবিদ্যালয়’ নামে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। পরের বছর থেকে পাঠদানের অনুমোদন পায় কলেজটি।

কলেজটির প্রতিষ্ঠাতা হন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব সাজ্জাদুল হাসান । পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের এমপি সাজ্জাদুল হাসান।b এতে এইচএসসি পর্যন্ত বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য এ তিনটি বিভগে পড়াশোনা চালু আছে। পাশাপাশি রয়েছে বিএম (কারিগরি) শাখা। বিশাল মাঠ, দৃষ্টি নন্দন একডেমিক ভবন, ছাত্র হোস্টেল, ছাত্রী হোস্টেলসহ দ্রুত অনেক ভবন গড়ে তোলা হয়।

প্রতিষ্ঠানটি ২০১৯ সালে এমপিওভুক্ত হয়। কলেজটিতে বর্তমানে বাণিজ্য বিভাগে ১ জন, বিজ্ঞানে ১ জন ও মানবিকে ১৫০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। আর কারিগরিতে প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী রয়েছে। কলেজটিতে ১৫ জন প্রভাষক ও একজন অধ্যক্ষ রয়েছেন। কলেজটি ২০২২ সালে ময়মনসিংহ বিভাগে শ্রেষ্ঠ কলেজ নির্বাচিত হয়। ২০২৩ সালে জেলা পর্যায়ে ও ২০২৪ সালে উপজেলা পর্যায়ে সেরা কলেজ নির্বাচিত হয়। শুরুতে কলেজটিতে শিক্ষার্থী সংখ্যা বেশি থাকলেও ধীরে ধীরে শিক্ষার্থী কমছে বলে জানা গেছে। ২২ অক্টোবর কলেজে গিয়ে বাণিজ্য বিভাগের দুইজন শিক্ষক ও একজন শিক্ষার্থী পাওয়া যায়। আর বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী কাউকেই পাওয়া যায়নি। বাণিজ্য বিভাগের প্রভাষক চয়ন গোস্বামী বলেন, আমাদের এলাকায় একটি মাত্র মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। তারাই মূলত পাশ করে কলেজে ভর্তি হয়। সেখানে বিজ্ঞান ও বাণিজের শিক্ষার্থী কম। তাই আমাদের কলেজেও ওই দুই বিভাগে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম। এরমধ্যেও অনেক শিক্ষার্থী স্কুল পাশ করে শহরের কলেজে গিয়ে ভর্তি হয়।

প্রাইভেট-কোচিংসহ পড়াশোনার নানা সুবিধার জন্য শহরের চলে যায়। যেহেতু হাওরাঞ্চলের স্কুলগুলোতে বিজ্ঞান-বানিজ্যর শিক্ষার্থী কম, তাই কলেজেও এর প্রভাব পড়ছে।একই কথা বলেন বাণিজ্য বিভাগের অপর প্রভাষক মো. খায়রুজ্জামান মনি। তিনি বলেন, চেষ্টা করেও বিজ্ঞান-বানিজ্যের শিক্ষার্থী বাড়ানো যাচ্ছে না। শিক্ষার্থী নাই তাই ক্লাশও হয় না। শিক্ষকরা কলেজে এসে বিভিন্নভাবে সময় কাটিয়ে চলে যান।বানিজ্য বিভাগের শিক্ষার্থী মিম আক্তার জানায়, শিক্ষার্থী নাই তাই ক্লাশ করতেও আগ্রহ পাই না। একা একা কি ক্লাশ করা যায়? সহপাঠী থাকলে পড়াশোনায় একটা প্রতিযোগীতা থাকে। পড়াশোনাতেও মনোযোগ আসে। এখন নিজের আগ্রহে যতটুকু পড়াশোনা করছি তাতেই চলে যাচ্ছে।বিজ্ঞান বিভাগের বিশাল ক্লাশরুম, ল্যাব থাকলেও একজন মাত্র শিক্ষার্থী থাকাও তিনি আসেন না নিয়মিত। শিক্ষকদের অবস্থাও একইরকম। বিজ্ঞান শিক্ষক শিক্ষার্থী কাউকে না পাওয়ায় তাদের বক্তব্য নেওয়া যায়নি।কলেজের অধ্যক্ষ মো. আমিনুল হক বলেন, কলেজটিতে মানবিক বিভাগে ও কারিগরি শাখায় যথেষ্ঠ শিক্ষার্থী রয়েছে। শুধুমাত্র বিজ্ঞান ও বাণিজ্য বিভাগে একজন করে দুইজন শিক্ষার্থী রয়েছে। আর শিক্ষক রয়েছেন ৮ জন। শুরুর দিকে ওই দুই বিভাগে শিক্ষার্থী ১২-১৪জন থাকলেও প্রতি বছর কমতে থাকে।

শিক্ষার্থী না থাকায় ওই দুই বিভাগের শিক্ষকরা অলস সময় পার করছেন। এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী প্রতি বিভাগে ন্যূনতম ২৫ জন শিক্ষার্থী থাকা আবশ্যক। এক্ষেত্রে এখান থেকে শিক্ষকদের বদলি করে নিয়ে যেসব কলেজে শিক্ষক ঘাটতি রয়েছে সেখানে দিলে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে। এ বিষয়টি কমিটির সভায় আলোচনায় তুলব।অধ্যক্ষ মো. আমিনুল হক আরও বলেন, কলেজটিতে বিশাল একাডেমিক ভবনসহ ছাত্র-ছাত্রী হোস্টেল রয়েছে। রয়েছে বিশাল দৃষ্টিনন্দন খেলার মাঠ। হাওরাঞ্চলের ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার বিরাট সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে এই কলেজটি হওয়ার কারণে। বিষয়টি অবহিত করলে কলেজের সভাপতি ও মোহনগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেজওয়ানা কবির বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে খোঁজ নিয়ে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শেয়ার করুন:

এ জাতীয় আরও সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এক ক্লিকে বিভাগের খবর

© All rights reserved © 2021 dainikjananetra
কারিগরি সহযোগিতায় পূর্বকন্ঠ আইটি