বাংলাদেশি কর্মীরা ১ লাখ টাকার কম খরচে মালয়েশিয়ায় যেতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ। তিনি জানান, চুক্তি অনুযায়ী কর্মীর আসা-যাওয়ার টিকিটসহ মালয়েশিয়া প্রান্তের খরচ নিয়োগকর্তা বহন করবেন।
মালয়েশিয়া থেকে ফিরে দেশটির শ্রমবাজার নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। মঙ্গলবার (২১ ডিসেম্বর) প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন হয়।
মন্ত্রী বলেন, ‘এখানে কর্মীর খরচ বলতে পাসপোর্ট তৈরি, বিএমইটি ফি, কল্যাণ বোর্ডের সদস্য ফি, মেডিক্যাল ফি এবং রিক্রুটিং এজেন্সির সার্ভিস চার্জ। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর ডাটাবেজ থেকেই কর্মী পাঠানো হবে। পাশাপাশি আগের মতো কোনো সিন্ডিকেট থাকবে না। সব বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সিই কর্মী পাঠাতে পারবেন।’ মালয়েশিয়ায় যেতে দালালদের টাকা না দেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।
প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী বলেন, ‘আগে সরকার নির্ধারিত অভিবাসন ব্যয় ছিল ১ লাখ ৬০-৬৫ হাজার টাকা, এখন তা অনেক কমবে। দুই দেশের এজেন্সি যৌথভাবে কাজ করবে। ব্যয়ের বেশিরভাগ খরচই নিয়োগকর্তা বহন করবেন। আগে বিমানভাড়া আমাদের কর্মীরা দিতেন, এ কারণে ব্যয় বেশি ছিল। এবার আশা করি, অনেক অনেক কমে যাবে। আমাদের রিক্রুটিং এজেন্সির চার্জ যাই হোক, সেটা আমাদের কর্মীদের ওপর পড়বে। মালয়েশিয়ার অংশেরটা নিয়োগকর্তা দেবেন। সার্ভিস চার্জ নির্ধারণ করা নেই।’
তিনি বলেন, ‘মালয়েশিয়া প্রান্তের খরচের মধ্যে আছে রিক্রুটমেন্ট এজেন্সি নিয়োগ, মালয়েশিয়ায় যাওয়ার বিমানভাড়া, আবাসন, কর্মে নিয়োগ। নতুন চুক্তি অনুযায়ী কর্মীকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর খরচও নিয়োগকর্তা বহন করবেন। নিয়োগকর্তা নিজ খরচে মালয়েশিয়ান রিক্রুটিং এজেন্ট নিযুক্ত করতে পারবেন। মালয়েশিয়ায় যাওয়ার পর বাংলাদেশি কর্মীর ইমিগ্রেশন ফি, ভিসা ফি, স্বাস্থ্য পরীক্ষার খরচ, ইন্স্যুরেন্স সংক্রান্ত খরচ, করোনা পরীক্ষার খরচ, কোয়ারেন্টিন সংক্রান্ত খরচসহ সব ব্যয় মালয়েশিয়ার নিয়োগকর্তা বা কোম্পানি বহন করবে। নিয়োগকর্তা কর্মীর মানসম্মত আবাসন, বিমা, চিকিৎসা এবং কল্যাণ নিশ্চিত করবেন।’
ইমরান আহমদ বলেন, ‘তিন বছর আগে সিন্ডিকেটের কারণে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এবার সেই সিন্ডিকেট থাকছে না। কর্মী পাঠাতে কোনো ধরনের সিন্ডিকেট কিংবা গ্রুপিং করার সুযোগ থাকবে না। তবে, এবার কর্মী নিয়োগে মালয়েশিয়ার রিক্রুটিং এজেন্সি জড়িত থাকছে, যা আগে ছিল না।’
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন বলেন, ‘শ্রমিকের স্বার্থ সংরক্ষণ করাই মূল লক্ষ্য। যাদের বৈধ রিক্রুটমেন্ট লাইসেন্স আছে, শুধু তারাই কর্মী পাঠাতে পারবেন। তবে, কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া এখনও শুরু হয়নি। কেউ যেন এখন কারো সঙ্গে টাকা-পয়সা লেনদেন না করেন। যখন প্রক্রিয়া শুরু হবে তখন সরকার জানাবে।’
এদিকে, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমদ সোমবার মালয়েশিয়ায় পুত্রজায়ায় দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাতো সেরি হামজা বিন জয়েনউদিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে অধিকতর সুশৃঙ্খল ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর বিষয়ে অত্যন্ত ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়।
বাংলাদেশ থেকে সব সেক্টরে কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে নতুন সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করায় বাংলাদেশের মন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন, শ্রম অভিবাসনের ক্ষেত্রে কর্মীর কল্যাণকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। একজন কর্মীও যেন হয়রানির শিকার না হন, সে বিষয়ে তার মন্ত্রণালয় সর্বোচ্চ সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছে।
মালয়েশিয়ায় অবৈধভাবে অবস্থানরত বাংলাদেশি কর্মীদের নিয়মিতকরণ এবং তাদের জন্য উপযুক্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার লক্ষ্যে মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন ও মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে কমিটি গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন দাতো সেরি হামজা বিন জয়েনউদিন।
পুত্রজায়ায় মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন, মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. গোলাম সারোয়ার এবং মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সেক্রেটারি জেনারেলসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply